ক্যামব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজের মোহাম্মদপুর ক্যাম্পাসে নৈতিক শিক্ষার যাত্রা শুরু

শিশুদের মাঝে রয়েছে অমিত সম্ভাবনা। আজকের শিশু আগামী দিনে দেশের নতুন কর্ণধার। এই সম্ভাবনাময় শিশুদের সৃজনশীলতার সাথে নৈতিকতা জাগ্রত করানো সম্ভব হলে দেশ পাবে প্রত্যাশিত জনগোষ্ঠী। তথ্যপ্রযুক্তির আগামী চ্যালেঞ্জ সাফল্যের সাথে মোকাবেলা করতে হলে তাদের নৈতিকতা পাঠদানের বিকল্প নেই।

ঘড়ির কাঁটায় যখন ১১টা, তখন ইটুএসডি-র একটি টিম ক্যামব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজের মোহাম্মদপুর ক্যাম্পাসে পৌঁছে। ক্যামব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজ শিক্ষার গুণগত মান বিকাশে কাজ করে যাচ্ছে সারা দেশে। এ স্কুল বোর্ড চ্যাম্পিয়নও হয়েছে একাধিকবার।

স্কুল ক্যাম্পাসে ঢুকতেই ভলো লাগল। সব কিছু পরিপাটি। শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের কর্মতৎপরতা ও স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগী মনোভাব ভালো লাগল। আমরা প্রথমেই অধ্যক্ষ মহোদয়ের রুমে গেলাম। সেখানে আগেই বিএসবি ক্যামব্রিয়ান এডুকেশন গ্রুপের কোঅর্ডিনেটর মো. আনিস উর রহমান আমাদের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। অপেক্ষা করছিলেন অধ্যক্ষ মহোদয়ও। তাদের আন্তরিক স্বাগতম আমাদের মুগ্ধ করল।

আমরা হলরুমে প্রবেশ করার সাথে সাথে শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে দাঁড়িয়ে আমাদের সম্মান জানাল। আমাদের উদ্দেশ্য দুটি। প্রথমত, একটি বেসলাইন জরিপ করা এবং পরে একটি ‘নৈতিক শিক্ষা ওয়ার্কবুক’ তাদের মাঝে বিতরণ করা।

আমরা প্রথমে বেসলাইন জরিপটার কাজ শুরু করলাম। জরিপের প্রশ্নপত্র পেয়ে শিক্ষার্থীরা উত্তর লেখার কাজ শুরু করে দিল। পরের পর্ব এথিকস এডুকেশন ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট-এর নৈতিক ক্লাসের জন্য ওয়ার্কবুক বিতরণ। রাজধানী ঢাকার ছোটবড় মোট ২০টি স্কুলে ইটুএসডির নৈতিক ক্লাস কার্যক্রম চলছে। ২০টি স্কুলে প্রায় ছয় শতাধিক শিক্ষার্থীকে ‘নৈতিক শিক্ষা ওয়ার্কবুক’ প্রদান করা হয়েছে। ১০০ জনকে নিয়ে নৈতিক অলিম্পিয়াড আয়োজন করা হবে। ২০ জনকে সেরা আর অন্য সবাইকে অংশগ্রহণমূলক সনদপত্র দেওয়া হবে।

শিক্ষার্থীদের জরিপের প্রশ্নের উত্তর লেখা শেষ হলে অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক কাজী আলী রেজা ছাত্রছাত্রীদের জিজ্ঞেস করেন, স্মার্ট ক্যাম্পাস বলতে তারা কী বোঝে। সাথে সাথে শিক্ষার্থী আমিনুর রহমান মাহবুবের উত্তর হলো, ‘স্মার্ট ক্যাম্পাস বলতে সেই ক্যাম্পাসকে বোঝায়, যেখানে ডিজিটালি পদ্ধতিতে পাঠদান করা হয়।’

এমন প্রশ্ন আর উত্তরে সারা হলরুম যেন উৎসুক হয়ে ওঠে, আরেকজন ছাত্রীর জবাব ছিল, ‘স্মার্ট হলো সুন্দর আচরণ।’

কাজী আলী রেজা বলেন, ‘আমরা যখন ছাত্র ছিলাম, তখন ডিজিটাল ক্যাম্পাস ছিল না। তোমরা ডিজিটাল যুগের ডিজিটাল শিক্ষার্থী। তবে তোমরা তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার করবে না। লেখাপড়ার উদ্দেশ্য হলো জ্ঞান অর্জন। আমি জানি তোমাদের অনেক কিছু শেখানো হয়। তোমাদের ক্যাম্পাসে কো-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি আছে। এটা ভালো। তবে তোমাদের এথিকাল হওয়া বেশি জরুরি।’

সেশন যখন পুরোমাত্রায় তুঙ্গে, তখন ছাত্রছাত্রীরা গ্রীষ্মের খরতাপে প্রায় নেয়ে উঠেছে। কিন্তু তারা শুনছে তন্ময় হয়ে, নিমগ্নতায় ডুবে গিয়ে।

পিনপতন নীরবতা পুরো হলরুমে। অধ্যক্ষ মহোদরসহ অন্য শিক্ষকরাও এই ভিন্নরকম পাঠদান পদ্ধতি লক্ষ্য করছেন। কাজী আলী রেজা আরও বলেন, ‘প্রকৃতি হলো অমূল্য সম্পদ। তোমরা প্রকৃতিকে নষ্ট করবে না। তোমরা প্রকৃতির মূল্য দেবে। প্রকৃতিকে ভালোবাসবে, তবে প্রকৃতিকে আসলে নষ্ট করা যায় না। প্রকৃতি আসলে রূপ বদলায় রূপান্তর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। আমরা প্রকৃতির রূপান্তর করছি। মানুষ প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল।’

উদ্বোধনী বক্তব্যে অধ্যক্ষ মো. আতাউর রহমান খান বলেন, ‘ইটুএসডিকে অভিনন্দন। ইটুএসডির নৈতিক শিক্ষা কোর্সে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ধন্যবাদ জানাই। আমরা গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষা দিতে চেষ্টা করি। আমাদের এ ক্যাম্পাসটি পুরো ডিজিটাল ক্যাম্পাস। আমাদের ক্যাম্পাসে আমরা ভালো মানুষ গড়তে চাই।’

বিএসবি ক্যামব্রিয়ান এডুকেশন গ্রুপের কোঅর্ডিনেটর ও বিজ্ঞান লেখক আনিস উর রহমান বলেন, ‘নৈতিক শিক্ষা বর্তমান সময়ের দাবি। মানুষের জীবনে দুটি দিক থাকে- একটি ইতিবাচক ও অপরটি নেতিবাচক। ইতিবাচক দিক হল মানবিকতাবোধ। মানবিকতাবোধই হলো নৈতিকতা। ইটুএসডি শিক্ষার্থীর নৈতিকতাবোধ জাগ্রতকরণে কাজ করছে। আমরা তাদের অভিনন্দিত করি।’

বেসলাইন জরিপ ও আলোচনা শেষে শিক্ষার্থীদের মাঝে ‘নৈতিক শিক্ষা ওয়ার্কবুক’ বিতরণ করা হয়। পুরো প্রক্রিয়ায় সহযোগী হিসেবে ছিলেন ইটুএসডি-র প্রোগ্রাম অফিসার জাহাঙ্গীর যুবরাজ ও ভলান্টিয়ার মোরসালিন হোসেন।