গুমাইল উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে ‘নৈতিক শিক্ষা ওয়ার্কবুক’ বিতরণ

প্রকৃতির মাঝে বেড়ে ওঠা সাজানো-গোছানো ছিমছাম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুমাইল উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ। ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, কর্মচারী সবার শিষ্টাচার ও নম্রতা মনে রাখার মতো। ব্যতিক্রমী শিক্ষাঙ্গন বলা যায়।

১৫ মে ২০২৩ ছিল এথিকস এডুকেশন ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট (ইটুএসডি)-এর ‘নৈতিক শিক্ষা ওয়ার্কবুক’ বিতরণের আরেকটি দিন। শিক্ষার্থীদের মাঝে নৈতিকতার আলো ছড়িয়ে দিতে ইটুএসডি-র এই কার্যক্রমে রাজধানী ঢাকার বাইরে এটি প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

‘নৈতিক শিক্ষা ওয়ার্কবুক’ তুলে দিচ্ছেন ইটুএসডি-র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী আলী রেজা

আমরা যখন গুমাইল উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে পৌঁছি, তখন বেলা ১টা। মাথার ওপরে সূর্য, প্রখর রোদ। আমরা বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতেই আমাদের সাদরে গ্রহণ করেন প্রতিষ্ঠান প্রধান অধ্যক্ষ আব্দুল বারেক মোল্লা, সহ-প্রধান শিক্ষক আব্দুস সাত্তার ও অন্যরা। আমাদের দলের নেতৃত্বে রয়েছেন ইটুএসডি-র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী আলী রেজা।

নবম শ্রেণির ৪১ জন শিক্ষার্থীকে ডিজিটাল ক্লাস রুমে জড়ো করা হয়। বেশিরভাগ ছিল মেয়ে শিক্ষার্থী। ছেলে শিক্ষার্থী ১৭ জন। আমরা প্রথমে বেসলাইন সার্ভেটা করে নিচ্ছিলাম। এ সময় কাজী আলী রেজা ও প্রতিষ্ঠান প্রধান অধ্যক্ষের নেতৃত্ব এসএমসি-র কয়জন সদস্যও প্রবেশ করেন। অভ্যাগতরা শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাই পর্বটি পর্যবেক্ষণ করেন। এরপর কিছুক্ষণ চলে আলোচনা পর্ব। সেখানে প্রধান আলোচক কাজী আলী রেজা জানতে চাইলেন, ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে, লেখাটি কার?’ দুজন শিক্ষার্থী সঠিক উত্তর দিলো, ‘কুসুম কুমারী দাস।’

স্কুল আঙিনায় ‘নৈতিক শিক্ষা ওয়ার্কবুক’ হাতে শিক্ষার্থীরা

পরের প্রশ্ন ছিল ‘তোমরা নৈতিকতা বলতে কী বোঝ?’ শিক্ষার্থী শাহরিন বলল, ‘নৈতিক শিক্ষা আমাদেরকে নৈতিকতায় পরিপূর্ণ করে তোলে।’

শিক্ষার্থী মাহফুজা বলল, ‘নৈতিকতা বলতে মানবিকতাবোধ জাগ্রত করা, উন্নত হওয়া।’

এই পর্যায়ে কাজী আলী রেজা প্রশ্ন করেন, ‘বিদ্যা ও শিক্ষার মধ্যে পার্থক্য কী?’ উত্তরে শিক্ষার্থী মিথিলা ব্যাখ্যা করে বলে, ‘লেখাপড়া বা পাঠ্যপুস্তকের মধ্য দিয়ে যে জ্ঞান লাভ করা হয়, তা হলো বিদ্যা আর লেখাপড়ার পাশাপাশি ব্যবহার, আচরণ ও মূল্যবোধে যারা জ্ঞানী হয়, তারা শিক্ষিত।’ উত্তরটা সবাইকে সন্তুষ্ট করল।

অনুষ্ঠানের অন্যতম সারথী হযরত শাহ আলী মডেল হাই স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক এম এ হামিদ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমাদের ভালো মানুষ হতে হবে। নিজে ভালো হলে অন্যকেও ভালো করা যায়। বাবা-মাকে পারিবারিক কাজে সাহায্য করবে, ক্লাসরুম পরিষ্কার রাখবে। যেখানে শেয়ারিং সেখানেই সফলতা।’

বেসলাইন জরিপে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ

অধ্যক্ষ মোহাম্মদ বারেক মোল্লা বললেন, ‘আপনাদের সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে সঙ্গে আমরাও যে কাজগুলো ভালো তা করব, খারাপ কাজগুলো বর্জন করব। পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি যদি আমরা নৈতিক জ্ঞান লাভ করতে পারি, তাহলে সমাজটা ভালো হবে। ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়ম দূর হবে।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন এসএমসি-র সদস্য ও সহ-প্রধান শিক্ষক আব্দুল সাত্তার।

আলোচনার শেষে শিক্ষার্থীদের মাঝে ‘নৈতিক শিক্ষা ওয়ার্কবুক’ বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালন করেন ইটুএসডি-র প্রোগ্রাম অফিসার জাহাঙ্গীর যুবরাজ। স্থিরচিত্র ও ভিডিওচিত্র ধারণে ছিলেন ভলান্টিয়ার মোরছালিন হোসেন।